মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমার লেখা দুটি কবিতা- "একাত্তরেই ছিল" ও "একাত্তরের চিত্রকল্প"

 

 

(১) একাত্তরেই ছিল !! - হাসান মাহমুদ

আজকে তোদের যা কিছু চাই একাত্তরেই ছিল,

“বাংলাদেশী” নামের বড়াই একাত্তরেই ছিল।

ঐক্যবোধের শক্ত জাতি, মুল্যবোধের ভক্ত জাতি,

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবোধ, একাত্তরেই ছিল,

ধর্মচোরার অধর্ম রোধ, একাত্তরেই ছিল।।।

 

শিকল পরা পায়ের নাচন, শিকল ভাঙ্গার মরণ-বাঁচন,

দীপ্ত ভবিষ্যতের বাণী, ক্ষিপ্ত ধরা কালনাগিনী,

তৃপ্ত বিজয়-মগ্ন মানব, একাত্তরেই ছিল,

ভগ্ন হত নগ্ন দানব একাত্তরেই ছিল।।।

 

নষ্ট পাকি’র ভ্রষ্ট খোয়াব, বজ্রমুষ্ঠি পষ্ট জওয়াব,

জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, মুক্তিপাগল প্রলয়-নৃত্য,

জন্মসুখের যন্ত্রণা তোর একাত্তরেই ছিল,

ক্ষণিক পাওয়া পরশপাথর একাত্তরেই ছিল।।।

 

মুক্ত দেশের সুস্মিতলোক, বিশ্ববাসীর বিস্মিত চোখ,

দিব্যলোকের সেই বরাভয়, দিগ্বলয়ের মুক্ত অভয়,

নিঃস্ব জাতির বিশ্ববিজয় একাত্তরেই ছিল,  

অভ্রভেদী সেই পরিচয় একাত্তরেই ছিল।।।

 

ঐ মহাকাল দিগ্বিদিকে, সেই ইতিহাস যাচ্ছে লিখে,

রক্তস্নাত পবিত্র দেশ একাত্তরেই ছিল,

ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশ একাত্তরেই ছিল।।।

ঐ যে জ্বলে একাত্তরের মরণজয়ী শিখা, 

পথভোলাকে পথ দেখানোর আলোকবর্তিকা !!

******************************

(২)   একাত্তরের চিত্রকল্প - হাসান মাহমুদ

পূবের দিকে মিষ্টি মধুর এক মায়াময় দেশ ছিল,

চাষী, কামার-কুমোর জেলে, তাঁতি সেথায় বেশ ছিল।

বারো মাসের তেরো পাবণ, টাক ডুমাডুম ঢাক ছিল,

লক্ষ বনলতা সেনের চোখে নীড়ের ডাক ছিল।

কদম-কেয়া, শাপলা-শালুক, দোয়েল-কোয়েল শিস্ ছিল,

খুব গোপনে ওৎ পাতা এক কালনাগিনীর বিষ ছিল।।।।

 

পাক নামে এক অশ্বডিম্ব দেশ বানাবার হাঁক ছিল,

পাকের ভেতর নাপাক কিছু শুভংকরের ফাঁক ছিল।

পশ্চিমেতে সুখের প্রাসাদ, পুর্বের ফুটপাত ছিল,

অপমানের অসম্মানের নিষ্ঠুর উৎপাত ছিল।

ওদের উদর ভরল যত, এদের ততই কম ছিল,

প্রতিবাদের উঠলে কন্ঠ অস্ত্র হাতে যম ছিল।

নষ্ট দেশের অষ্টপ্রহর যতই বৈরী হচ্ছিল,

বাংলাদেশের ভ্রূণ অলখে ততই তৈরী হচ্ছিল।

তারপর .....

 

একাত্তরের বিস্ফোরণে দোয়েল-কোয়েল পুড়ছিল,

আকাশ জুড়ে লক্ষ নাপাক কালশকুনী উড়ছিল।

চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ ফুলের কলি ঝরছিল,

মুনাফেকের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছিল।

লক্ষ লক্ষ ধর্ষিতা বোন, ধর্ষিতা মা কাঁদছিল,

চতুর্দিকে শুধুই রক্ত, লাশ ও আর্তনাদ ছিল।

যে দেখেনি বুঝবে না সে, এমন কেয়ামত ছিল,

কেয়ামতেই দেশের স্বাধীনতার নেয়ামত ছিল।

 

মানচিত্র ভাঙ্গার গড়ার প্রচণ্ড উত্তাপ ছিল,

সেই সাথে এক বজ্রকণ্ঠে আকাশ-বাতাস কাঁপছিল।

বিশাল বিপুল তূর্য্য হাতে বিশাল বিপুল শেখ ছিল,

বিষ্ময়ে সব বিশ্ববাসী মুগ্ধ চোখে দেখছিল।

জাতির মাথায় সোনার মুকুট তাজউদ্দিন তাজ ছিল,

তাজের হাতেই স্বাধীনতার প্রলয়শংখ বাজছিল।

জন্ম-সুখের উৎসবে দেশ মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছিল,

ষোলই ডিসেম্বর সুদুরে মিষ্টি উঁকি দিচ্ছিল।

 

যে দেখেনি বুঝবে না সে, এমনি কেয়ামত ছিল,

কেয়ামতের শেষে নাপাক দানব নাকে খৎ ছিল।

ওই যে জ্বলে একাত্তরের মরণজয়ী শিখা,

ঝড় তুফানে পথ দেখানোর আলোকবর্তিকা !

Print